কুমারখালী ( কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: বাড়ির উঠানে কাঠের চৌকি। তার উপরে লাল চাদরে ঢাকা রয়েছে সরকারি চাকুরিজীবি জাহিদুল ইসলাম ( ৪৫) ও তার ছেলে জিহাদের (৯) মরদেহ। সেখানে আহাজারি করছেন শোকের মাতম শিলু খাতুন। তাদের ঘিরে রয়েছেন উৎসুক জনতা ও স্বজনরা। তারা শিলুকে শান্ত্বনা দিচ্ছেন।
২২ জুলাই মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের জংগলী গ্রামের স্কুলপাড়ায় সরেজমিন গিয়ে এমন হৃদয়বেদারক দৃশ্য দেখা যায়। এরআগে বিকেল ৪টার দিকে মরা কালিগঙ্গা নদী থেকে জাহিদুল ও জিহাদের মরদেহ উদ্ধার করে এলাকাবাসী।
নিহত জাহিদুল ওই এলাকার রফি মণ্ডলের ছেলে ও কুষ্টিয়া পল্লী ও দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন কার্যালয়ের কর্মচারী। এবং তার ছেলে জিহাদ জংগলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, জাহিদুল সরকারি চাকুরির পাশাপাশি চাষাবাদ করেন। মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে ছেলে জিহাদকে নিয়ে বাড়ির পাশের মরা কালিগঙ্গা নদীতে পাট জাগ দিতে গিয়েছিলেন জাহিদুল। পাট জাগ দেওয়া শেষে দুপুর আড়াইটার দিকে ছেলেকে কাঁদে নিয়ে নদীর মাঝ থেকে তীরে ফিরছিলেন। হঠাৎ জাহিদুল পানিতে ডুবে যায়। এরপর ছেলে জিহাদ তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে সেও ডুবে যায়। বিষয়টি নদীর তীরে থাকা স্থানীয় ফয়জুল হক (৬৫) টের পেয়ে স্থানীয়দের খবর দেন। পরে এলাকাবাসী প্রায় দেড়ঘণ্টা নদীতে খোঁজাখুঁজি করে প্রথমে ছেলে জিহাদ এবং পরে একই স্থান থেকে তার বাবা জাহিদুলের মরদেহ উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শী ফয়জুল হক বলেন, জাগ দেওয়া শেষে জাহিদুল তার ছেলেকে কাঁদে নিয়ে ফিরছিল। হঠাৎ প্রথমে বাবা এবং পরে ছেলে পানিতে ডুবে যায়। ডুবতে দেখে দ্রুত স্থানীয়দের খবর দিই।
নিহত জাহিদুল ইসলামের বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, বাড়িতে খাচ্ছিলাম। খবর পেয়ে দ্রুত নদীতে গিয়ে দেখে শত শত মানুষ। সবাই উদ্ধারের চেষ্টা করছে। পরে ৪টার দিকে বাপ বেটার মরদেহ পাওয়া যায়। তাঁর ভাষ্য, পাট জাগ দেওয়ার জন্য জাহিদুল ছুটিতে ছিল আজ। বাপ বেটা দুজনেই সাঁতার জানত।
নদীতে ডুবে বাপ বেটার মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় শোকের মাতম চলছে বলে জানিয়েছেন চাঁদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশিদুল ইসলাম তুষার।
কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইন্দ্র প্রসাদ বিশ্বাস বলেন, নদীতে পাট জাগ দিতে গিয়ে বাবা ও ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আমরা পৌছানোর আগেই গ্রামবাসী মরদেহ উদ্ধার করেছে।
কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক বিল্লাল হোসেন খাঁন বলেন, পাট জাগ দিতে গিয়ে পানিতে ডুবে বাবা ও ছেলের মৃত্যুর খবর প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available