ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি: বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আহত শিক্ষক মাসুকা বেগমের (৩৭) মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর আগে হাসপাতালে পাশের বেডের আরেক শিক্ষককে বলে যাওয়া শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে তার বোনের বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানান, ২২ জুলাই মঙ্গলবার বাদ আসর জেলার আশুগঞ্জের সোহাগপুর ঈদগাহ মাঠ কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
নিহতের জানাজায় এলাকার লোকজন, পরিবারের লোকজন, আত্মীয়-স্বজন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ তার শিক্ষক ও সহকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
নিহত মাসুকা বেগম জেলা শহরের মেড্ডা সবুজবাগ এলাকার সিদ্দিক আহমেদের মেয়ে।
এর আগে সোমবার দুপুরে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার সময় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ক্লাস নিচ্ছিলেন শিক্ষক মাসুকা বেগম। তিনি ওই স্কুলের ইংরেজি মাধ্যমের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক। ৪ বছর আগে তিনি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। তাঁকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। পরে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহতের বড় বোন জামাই আহসান হাবিব পারভেজ বলেন, মৃত্যুর আগে হাসপাতালে পাশের বেডে চিকিৎসাধীন আরেক শিক্ষককে মাসুকা তাঁর শেষ ইচ্ছার কথা বলেন। তিনি বলেন, মৃত্যু হলে যেন তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সোহাগপুরে কবর দেওয়া হয়।
নিহতের বাবা সিদ্দিক আহমেদ বলেন, আমার বলার কোনো ভাষা নাই। আর আমার কোনো অভিযোগ নাই। আমি আমার মেয়ের জন্য দোয়া চাই। পাশাপাশি নিহত সবার জন্য দোয়া চাই।
মাসুকার মৃত্যুর খবর শুনে তার সহপাঠীরা জানাজায় এসে বলেন, অত্যন্ত বিনয়ী ও মেধাবী ছিলেন মাসুকা। তিনি শিক্ষার আলো জ্বালাতে গিয়ে নিজেই জ্বলে পুড়ে অংগার হয়ে গেছেন। তার এই আত্মত্যাগ দেশবাসী মনে রাখবেন।
সোহাগপুরের বিশিষ্ট মুরুব্বি ও আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী মো শাহজাহান সিরাজ বলেন, ছোটবেলা থেকেই মাসুকা আশুগঞ্জ তার বোনের বাড়িতে বেশি ছিল। তার এমন মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। দোয়া করি, আল্লাহ তার এবং তার সাথে মৃত্যুবরণকারী সকলকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ মোকাম নসিব করবেন। নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
ভৈরব সরকারি জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আবু হানিফা বলেন, মাসুকা বেগমের মৃত্যুতে আমরা স্তব্ধ, আমরা শোকাহত। এমন মেধাবীরা ঝড়ে যাওয়ায় দেশের ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি ওর মত নম্র ভদ্র মেয়ের এমন মৃত্যু আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। তিনি নিজে মারা যাওয়ার আগে অনেক শিক্ষার্থীকে আগুন থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসে নিজিই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। আমরা মাসুকা ও তার সঙ্গে মৃত্যুবরণকারী সকলের জন্য দোয়া করি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available