বকশীগঞ্জে উদ্বোধন না হওয়ায় পড়ে আছে দেড় কোটি টাকার ভবন!
বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি: জামালপুরের বকশীগঞ্জে নির্মাণের ৫ বছরেও উদ্বোধন হয়নি সূর্যনগর নঈম মিয়ার বাজারের গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্পের সেড ঘর। ফলে ভবনটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও তদারকি না থাকায় অকেজো ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ও যন্ত্রাংশ। ভবনটির কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হলে লাভবান হবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।তবে উপজেলা প্রশাসন শিগগিরই ভবনটির উদ্বোধন ও কার্যক্রম চালু করার আশ্বাস দিয়েছেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামালপুর জেলার শত বছরের হাট বকশীগঞ্জের সূর্যনগর নঈম মিয়ার বাজার। ওই বাজারের নাম ডাক জেলার গণ্ডি পেরিয়ে রয়েছে দেশব্যাপী। বাজারটির ব্যাপক নাম ডাক থাকলেও শত বছর পেরোলেও তেমন উন্নয়ন হয়নি গ্রামীণ এই বাজারটিতে। প্রতি বছর প্রায় সোয়া কোটি টাকা রাজস্ব আয় হলেও উন্নয়ন বঞ্চিত রয়েছে নঈম মিয়ার বাজারে।২০১৯ সালে বাজার আধুনিকীকরণ ও বাজার উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় বকশীগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। তাই এলজিইডি ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে “দেশব্যাপী গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন” প্রকল্প হাতে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় এক কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় দ্বিতল ভবন। ২০২০ সালের শেষের দিকে ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়।মেসার্স লাবনী এন্টারপ্রাইজ ভবনটি নির্মাণের কাজ পায়। ভবনটির নিচে মাছ বাজারের সেড এবং দ্বিতীয় তলায় ব্যবসায়ীদের জন্য ৯টি কক্ষ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ভবনটি নির্মাণের ৫ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত উদ্বোধন হয়নি। নির্মাণের পর ওই ভবনের নিচের সেডটিতে মাছ ব্যবসায়ীদের বসার কথা থাকলেও বর্তমানে স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছেন। দ্বিতীয় তলায় ৯টি দোকানের কক্ষ এখনো বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ব্যবহার হচ্ছে না আধুনিক মানের টয়লেট ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি।মাছ ব্যবসায়ীদের দাবি ভবনটি উদ্বোধন হলেই তারা বসতে পারবেন এবং নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসা করতে পারবেন। কিন্তু সময়মতো ভবনটির কার্যক্রম চালু না হওয়ায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে ভবনটি। সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার হাট বার হলেও প্রতিনিয়ত ময়লা আবর্জনা রাখায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ভবনটির দ্বিতীয় তলা। ময়লার স্তূপ রাখায় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে অন্যান্য ব্যবসায়ীরা।ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ভবন নির্মাণের পর এলজিইডির তদারকি না থাকায় অযত্ন অবহেলায় পড়ে রয়েছে ভবনটি। ইতোমধ্যে ভবনের সোলার প্যানেল, ব্যাটারি ও গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামাদি চুরি হয়েছে। রাত হলেই ভবনটিতে বসে মাদকের আড্ডা। মাছ ব্যবসায়ীরা তাদের জন্য নির্মিত সেডটি বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এবং ভবনটি উদ্বোধনের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, গ্রামীণ হাট বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের এই ভবনটি নির্মাণের পর স্থানীয় এলজিইডি আর কোন খোঁজ নেননি এবং উদ্বোধনের কোন উদ্যোগ নেয় নি। ফলে মাছ ব্যবসায়ীদের পরিবর্তে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছে। এছাড়াও দ্বিতীয় তলার কক্ষগুলো ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ না দেওয়ায় নির্মাণের সার্থকতা হারিয়েছে ভবনটি। তাই তারা দ্রুত ভবনটির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা প্রয়োজন।বকশীগঞ্জ এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. শামছুল হক বলেন, গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো প্রকল্পের আওতায় ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা অনেক বার ভবনটি চালুর উদ্যোগ নিলেও বিভিন্ন কারণে দোকান ঘর গুলো বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নি। তাই ইউএনও মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে ভবনটির কক্ষ গুলো বরাদ্দ দেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা বলেন, নঈম মিয়ার বাজারের এই ভবনটি কেন ব্যবহার হচ্ছে না তা বের করার চেষ্টা করছি। এটা চালু হয়নি এটা আমার জানা ছিল না। ব্যবসায়ীরা যাতে সঠিকভাবে ব্যবসা করতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনটির কার্যক্রম চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ব্যবসায়ীদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষ গুলো বরাদ্দ দেওয়া হবে।