বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসনের অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্তে নেমেছে দুদক
রাঙামাটি প্রতিনিধি: রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, অনুদান বিতরণে অনিয়ম এবং ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে চাঁদা আদায়সহ নানাবিধ অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন রাঙামাটির সমন্বিত কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট টিম বাঘাইছড়ি উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করেছে।১৬ জুলাই বুধবার দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ফরহাদ হোসেনের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে বলে রাঙামাটিস্থ সমন্বিত কার্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।দুদকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, রাঙামাটি থেকে বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদে গিয়ে উক্ত অভিযানের শুরুতে বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতার কার্যালয়ে গেলে সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পিআইওকে পাওয়া যায়নি।এরপর এনফোর্সমেন্ট টিম বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে কর্তব্যরত ইএনও শিরীন আক্তারকে অভিযান সম্পর্কে অবহিত করেন।অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রেকর্ডপত্র সরবরাহের জন্য এনফোর্সমেন্ট টিমের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনুরোধ করলে চাহিদাপত্র ব্যতীত রেকর্ডপত্র দেওয়া যাবে না মর্মে জানান ইউএনও। এসময় তাৎক্ষণিকভাবে রেকর্ডপত্র সরবরাহের জন্য এনফোর্সমেন্ট টিম লিডার লিখিতভাবে রেকর্ডপত্র সরবরাহের জন্য অধিযাচনপত্র দাখিল করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরিন আক্তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে পরের দিন রেকর্ডপত্র সরবরাহ করবেন মর্মে এনফোর্সমেন্ট টিমকে জানান।পরবর্তীতে ইউএনওকে কাবিখা/কাবিটাসহ অন্যান্য রেকর্ডপত্র দেখানোর অনুরোধ করলে পিআইও অফিসের অফিস সহকারী এনফোর্সমেন্ট টিমকে এ সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র দেখান।দুদক কর্তৃপক্ষ জানায়, এনফোর্সমেন্ট টিমের কাছে উক্ত রেকর্ডপত্র বাহ্যিক দৃষ্টিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বেশকিছু অসংগতি পরিলক্ষিত হয়। পরবর্তীতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর, ব্রিক ফিল্ড ও তামাক চুল্লি সরেজমিনে পরিদর্শন করে এনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্যগণ।অভিযোগের বিষয়সমূহ বিশদভাবে যাচাইয়ের জন্য টিম প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। এসব রেকর্ডপত্র পর্যালোচনাপূর্বক কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে প্রাপ্ততথ্যে জানা গেছে, বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৩৫তম বিসিএস এর শিরিন আক্তার, ইতোপূর্বে তিনি চট্টগ্রাম ডিসি অফিস কর্মরত ছিলেন; ২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।শিরীন আক্তার প্রশাসনিক কার্যক্রমে সক্রিয় থাকলেও, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, রাজনৈতিক পক্ষপাত ও চাঁদাবাজির অভিযোগের পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত আচরণও ঠিক নয় বলে বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই ছায়া তদন্তে নেমেছে একাধিক সংস্থা।সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনী কার্যক্রমে সরাসরি হস্তক্ষেপের অভিযোগের পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পে আর্থিক অনিয়ম, এডিপি প্রকল্পসমূহে নিজের পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে কাজ করিয়ে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ, সাবমার্সিবল টিউবওয়েল প্রকল্প থেকে প্রভাব খাটিয়ে অর্থ গ্রহণ, ইটভাটাগুলো থেকে লাখ লাখ টাকায় আদায়; চলতি বছর তামাক চাষিদের কাছ থেকেও উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ ছাড়াও বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপনের সময় স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাজার কমিটি ও ইটভাটা থেকে প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।মুজিববর্ষের বরাদ্দকৃত ২০৮টি গভীর নলকূপের মধ্যে ৫২টি ঘরে বিনামূল্যে স্থাপনের কথা থাকলেও প্রতিটি থেকে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ, মুজিববর্ষে খেদারমারা ইউনিয়নে ২৫টি ঘরের নলকূপ স্থাপনের ক্ষেত্রে এক জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে একইভাবে উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ; বন্যা পরবর্তী ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম; একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ঠিকাদারসহ সকল দ্বায়িত্বে ইউএনও দ্বায়িত্ব পালন করে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ছাড়াও তার ঢাকায় বাড়ি, সম্পদের হিসাবের খবরও সংশ্লিষ্টরা নিচ্ছেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দুর্নীতির ধারাবাহিকতায় এখনো পাহাড়ের নানান প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানের জনবল বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় আরো ইকুইপমেন্ট বৃদ্ধি করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাটকারিদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আরও জোরদারের দাবি স্থানীয়দের।