নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরওয়াপদা ইউনিয়নের থানারহাট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান এবং একই স্কুলের এডহক কমিটির সভাপতি মো. রহিম উল্লাহর মধ্যে দ্বিমুখী মারামারির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে।
৬ই আগস্ট গতকাল বিকেল ৪টার সময় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগের ভিত্তিতে স্কুলের সভাপতি মো. রহিম উল্লাহর সাথে কথা বললে তিনি জানান, তিনি ওটারহাট হাই স্কুলের সহকারী শিক্ষক। তিনি তার স্কুল শেষ করে থানারহাট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে আসেন সাবেক সাময়িক বহিস্কৃত শিক্ষক আব্দুল মান্নানকে পুনরায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে বুঝিয়ে দেবার জন্য এবং তাকে যাবতীয় কাগজপত্র ও অফিসিয়াল বিষয়াদি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য।
বুঝিয়ে দেওয়ার সময় প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নানকে তার অফিস থেকে শিক্ষক মিলনায়তনে ডাকা হয়। এসময় তাকে একটি চিঠি দেখিয়ে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। কিন্তু মান্নান চিঠিতে তার নাম না থাকায় স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন এবং সেখানে থেকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে চলে যান।
এতে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সভাপতি শিক্ষক মিলনায়তন থেকে বের হয়ে অফিসের সামনে আসলে দুপক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। এসময় সভাপতির গায়ের শার্ট ছিঁড়ে ফেলেন প্রধান শিক্ষক।
এ বিষয়ে থানারহাট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, আমি এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক খোদেজা আক্তারের মধ্যে একটি বিরোধের কারণে আমাকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু গত ৩রা আগস্ট কমিটি, সকল শিক্ষক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে আমাকে পুনরায় প্রধান শিক্ষক হিসেবে বহাল করা হয়েছে।
সুতরাং আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমার সকল ডকুমেন্ট বুঝে নিতে সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে নোটিশ দিয়েছিলাম এবং স্কুলের সভাপতিকে অবহিত করেছিলাম। গতকাল স্কুলের সভাপতি স্কুল ছুটির সময় আমাকে আমার অফিস থেকে শিক্ষক মিলনায়তনে ডাকার পর আমি সেখানে যাই। সেখানে একটি চিঠিতে স্পষ্টভাবে দেখেছি প্রেরক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এবং প্রাপক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জনাব খোদেজা আক্তারের নাম রয়েছে।
আমি সেখানে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করি এবং শিক্ষক মিলনায়তন ত্যাগ করে আমার অফিসে চলে আসি। তখন সভাপতি আমার পেছনে এসে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমাকে মারধর ও হেনস্তা করেন। আমি পালাতে গিয়ে দ্রুত কক্ষে চলে যাই। সেখানে তিনি আমাকে পাকা দেয়ালের পাশে ধাক্কা দেন এবং জানালার সঙ্গে ধাক্কা দিয়ে মারধর করেন। চেয়ারে আছাড় দেয়ায় প্লাস্টিকের চেয়ার ভেঙে যায়, আমার চশমা ভেঙে যায়, এবং টেবিলে আছাড় দেয়ায় টেবিলের ওপর থাকা ফুলদানি ভেঙে যায়।
এমতাবস্থায় আমার কয়েকজন সহকর্মী আমাকে উদ্ধার করেন। আমি জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে চর জব্বার থানার এসআই মাহমুদ আমাকে উদ্ধার করে ঘটনাস্থল ত্যাগে সহযোগিতা করেন।
এ ঘটনায় এলাকাবাসী ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা জানান, একই স্কুলে এক শিক্ষক অন্য শিক্ষককে কিল-ঘুষি, জুতা দিয়ে পেটানো, রাস্তায় প্রধান শিক্ষককে সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লাঠি নিয়ে তাড়া করা, প্রধান শিক্ষক কর্তৃক নারী শিক্ষক হেনস্তা এবং সর্বশেষ সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের মধ্যে মারামারি আমরা আর দেখতে চাই না। একটি কুচক্রী মহল এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য উঠে পড়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
এ সময় বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান ও প্রতিষ্ঠান রক্ষার্থে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষক নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসীর প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
চর জব্বার থানার এসআই মাহমুদ জানান, ৯৯৯-এ সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি এবং প্রধান শিক্ষক ও স্কুল সভাপতিকে স্কুল থেকে ত্যাগ করতে বলি। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তিনি আরও বলেন, উভয় পক্ষ অভিযোগ করলে আইন তার ব্যবস্থা নেবে।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available