কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি: জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মোলামগাড়ীহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এক বছর ধরে শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিতভাবে সরকারি বেতন- ভাতা ও উৎসব ভাতা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামীলীগ নেতা সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার একাধিক মামলা চলমান রয়েছে এবং তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে পলাতক থাকলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় পুরো সময়জুড়ে সরকারি অর্থ গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।
রফিকুল ইসলাম এ বিদ্যালয়ের বাংলা বিষয়ের শিক্ষক ও জিন্দারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং একইসাথে জেলা পরিষদের সদস্য পদেও দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বিদ্যালয়ে অনিয়মিত ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন একই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক। তাঁদের ভাষ্য, মামলার পর পলাতক থাকলেও প্রধান শিক্ষক মোসাদ্দেক হোসেনের সহায়তায় তিনি তার স্বাভাবিক বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত এক বছর ধরে রফিকুল ইসলামের উপস্থিতির কোনো প্রমাণ নেই। হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর নেই, কোনো ক্লাস নেওয়ার রেকর্ড নেই এবং বিদ্যালয়ের কোনো কর্মকাণ্ডেও তিনি অংশগ্রহণ করেননি। তবু তার নামে প্রায় চার লক্ষাধিক টাকার বেশি বেতন-ভাতা উত্তোলন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. মোসাদ্দেক হোসেন স্বীকার করে বলেন, রফিকুল ইসলামের পরিবর্তে পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তে একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং রফিকুল তাঁর বেতন সেই ব্যক্তিকে দিয়ে থাকেন। এখন থেকে তার বেতন উত্তোলনের সুযোগ বন্ধ করা হবে। তবে এই খণ্ডকালীন শিক্ষক মূলত একই বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখায় ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কর্মরত এবং তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা মাত্র এইচএসসি পাস। এমন একজনের মাধ্যমে পাঠদান করানো শুধুমাত্র নিয়মবহির্ভূত নয়, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান নিয়েও বড় প্রশ্ন উঠেছে।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রফিকুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যালয়ের প্রতি চরম উদাসীন ছিলেন। তিনি বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসতেন না, ক্লাসও করাতেন না। প্রধান শিক্ষকের ছত্রছায়ায় তিনি একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করতেন। এমনকি কেউ তার অনুপস্থিতি নিয়ে কথা বলার সাহসও পেত না।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রফিকুল ইসলামকে দেখেনি বলেই জানিয়েছে। একাধিক শিক্ষার্থী জানায়,রফিকুল স্যার নামে একজন শিক্ষক আছেন, শুধু শুনেছি। কোনোদিন ক্লাসে দেখিনি। উনি কেমন দেখতে, তাও জানি না। তবে নেতা রফিকুল মাস্টার নামেই সবাই চেনে।
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাজী মো. মনোয়ারুল হাসান বলেন, রফিকুল ইসলাম যে পলাতক রয়েছেন তা তার জানা আছে। তবে তিনি নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন, এ বিষয়ে কেউ তাকে অভিযোগ করেনি। যদি অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, একজন অনুমোদিত শিক্ষকের জায়গায় খণ্ডকালীন কাউকে ক্লাস করানোর কোন সুযোগ নেই।
জয়পুরহাট জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. রুহুল আমিন জানান, এ ধরনের অনিয়ম সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না। একজন সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক যদি বিদ্যালয়ে না এসে সরকারি অর্থ উত্তোলন করেন, তবে তা চরম অনিয়ম। এবিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কালাই উপজেলার নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান বলেন, রফিকুল ইসলামের অনুপস্থিতির বিষয়টি তিনি জানেন এবং প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তে একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে এটি নীতিমালার পরিপন্থি। এজন্য আমি ইতোমধ্যে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। তাদের দিকনির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রফিকুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ থাকায় কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available