ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি: ‘ধর্মগুরু’ পরিচয়ের প্রভাবে বছরের-পর-বছর অনুপস্থিত থেকেও ডুমুরিয়া উপজেলার পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয়’র কর্মচারী নারায়ণ চন্দ্র রায় সরকারি বেতন উত্তোলন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগকারী, এলাকাবাসী ও কলেজ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বলে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে কলেজটি এমপিও ভুক্ত হওয়ার সময় থেকেই উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের জিয়েলতলা গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র রায়, কে-৪২১২২৯ ইনডেক্সধারী ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসাবে সরকারি বেতন-ভাতা তুলছেন। ২০০২ সালে সাবেক অধ্যক্ষ অপূর্ব বৈদ্য’র সময়ে নারায়ণ রায় ওরফে নারায়ণ গোস্বামী ওরফে নারায়ণ গোসাই সপ্তাহে ২-৩ দিন হাজিরা দিতেন। কিন্তু ২০১০ সালে অধ্যক্ষ অপূর্ব বৈদ্যকে জোরপূর্বক সরিয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ সুভাষ সরদার, অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নারায়ণ গোসাই কলেজে হাজির হওয়া প্রায় বন্ধই করে দেন। তবে মাসের শেষে ১ দিন গিয়ে সারা-মাসের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন নিয়ে আসেন। বিগত ১৬ বছর ধরে এভাবেই চলছিলো। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চলতি বছর কিছু শিক্ষক-অভিভাবকের প্রতিরোধের প্রেক্ষিতে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে গোসাই আর হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে পারেননি। কিন্তু তাতে কী? সরকারি বেতন তুলতে কোনো অসুবিধাই হয়নি। এর সঙ্গে অধ্যক্ষ সুভাষ সরদারও জড়িত আছেন মর্মে সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কাছে এলাকাবাসী, অভিভাবক ও শিক্ষ-কর্মচারীর পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, সরকারি সকল নিয়ম-আদেশ উপেক্ষা করে ২০১০ সালে গায়ের জোরে সুভাষ বাবু অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করার পর থেকে নারায়ণ গোসাই স্বরাজ-স্বাধীন হয়ে গেছে।
কলেজ কমিটির অভিভাবক প্রতিনিধি হামিদুর রহমান বলেন, ‘নারায়ণ গোসাই তো কলেজে না এসেই বেতন নেয়। তাছাড়া সবার ওপরে একটা খবরদারী চালায়, ভাব দেখায়, সেই প্রিন্সিপাল।’
অধ্যক্ষ সুভাষ সরদার বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর নারায়ণ গোসাই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয়ে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করে, যে-কারণে তাকে হাজির হতে চাপ দেওয়া খুব সমস্যা বুঝে একজন বিকল্প মানুষ দিতে বলি। তখন অমৃত বিশ্বাস নামের একজনকে ডেপুটেশনে দেয়। আর স্বাক্ষর না করলেও জুলাই-আগস্ট মাসের বেতন ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ই.এফ.টি) সিস্টেমের কারণে তার একাউন্টে টাকা ঢুকে গেছে। তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ওই টাকাটা বাংলাদেশ ব্যাংকে ফেরত দেবো।
কলেজ গভর্নিং কমিটি সভাপতি মাওলানা মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আমি খুব-দ্রুতই মিটিং ডেকে গোসাইয়ের বিরুদ্ধে রেজুলেশন করতে প্রিন্সিপালকে বলেছি।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, খুলনার উপ-পরিচালক ড. সাজ্জাত হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়টিতে গভর্নিং বডিই ব্যবস্থা নিতে পারে। তারা রেজুলেশন করে আমার কাছে পাঠালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
অন্যদিকে, জিয়েলতলা গ্রামের পরিতোষ মন্ডল তার ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে গত ১৭ জুলাই ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে নারায়ণ গোসাইয়ের নামে ডুমুরিয়া থানায় মামলা করলে পুলিশ গত ২৭ আগস্ট তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available