নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে মোট ২৭ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এছাড়া ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর গুলিতেই মারা গেছেন ২৪ জন। এবং বিএসএফ কমপক্ষে ৩৩৯৯ জনকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশইন করেছে।

৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি জানুয়ারি-নভেম্বর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি দেশের ১৫টি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও সংগঠনের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।


এ ছাড়া গত ১১ মাসে মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক আনসার সদস্যসহ ১২ জন বাংলাদেশি আহত এবং ১ জন নিহত হয়েছেন। নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের জলসীমা থেকে ১৯টি ট্রলারসহ ১৬৩ জন জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালে জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৬৯টি হামলার ঘটনায় বিএসএফ কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয়ে ২৪ জন বাংলাদেশী নিহত, ৩৮ জন আহত ও ৬০ জন গ্রেফতার হয়েছেন। এছাড়া সিলেট সীমান্তে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে শাহেদ আহমদ (২৫) ও জামাল উদ্দিন (৪৫) নামে দুই বাংলাদেশি তরুণ নিহত এবং অপর ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ জন আহত হয়েছেন। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে এক বাংলাদেশী যুবককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেছে ভারতীয় নাগরিকরা। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা সীমান্ত থেকে নাজিমুদ্দিন নামে এক যুবকের এবং কুমিল্লা সীমান্তে গোমতি নদীর পাড় থেকে কাজী ছবির নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে কমপক্ষে ৩৩৯৯ জনকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে বিএসএফ। এছাড়া গত নভেম্বর মাসে ভারতীয় জলসীমার কাছে বঙ্গোপসাগর থেকে ১০৮ জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে ভারতীয় কোস্টগার্ড।
অন্যদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির গুলিতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ আহত হয়েছেন। গত জানুয়ারি মাসে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও মর্টারশেল বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় এসে পড়ায় স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
এছাড়াও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক আনসার সদস্যসহ ১২ জন বাংলাদেশী আহত হয়েছেন এবং ১ জন নিহত হয়েছেন। এই সময়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের জলসীমা থেকে ১৯ টি ট্রলারসহ ১৬৩ জন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি।
গত ১১ অক্টোবর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশফাঁড়ি সীমান্ত পিলার ৪০ নম্বরের কাছে নো-ম্যানস ল্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত টহলরত অবস্থায় মাইন বিস্ফোরণে বিজিবি নায়েক আক্তার হোসেনের ডান পায়ের গোড়ালি সম্পূর্ণ উড়ে যায়। তার বাম পা মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তার মৃত্যু হয়। এছাড়া, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে আসা গুলিতে কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ে ছেনুয়ারা বেগম (৩৫) নামের এক নারী গুরুতর আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গত এগারো মাসে মাসে কমপক্ষে ১৯০৯ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ৭৮৯ জন, যাদের মধ্যে ৪৫৫ (৫৮%) জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, ১৭৪ (২২%) জন নারী ও কন্যা শিশু গণধর্ষনের শিকার হয়েছেন এবং ধর্ষনের পর হত্যা করা হয়েছে ২৬ জনকে ও আত্মহত্যা করেছেন ৯ জন নারী। ৪১০ জন নারী ও কন্যা শিশু যৌন নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন তন্মধ্যে শিশু ২২৫ জন।
গত এগারো মাসে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩১ জন ও আহত হয়েছেন ৩১ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ৪ জন নারী। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন অন্তত ৩৫২ জন, আহত হয়েছেন ১১৫ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১৭৩ জন নারী। এসিড সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ২ এবং আহত হয়েছেন ২ জন। অন্যদিকে, গত এগারো মাসে কমপক্ষে ১৩০১ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন যাদের মধ্যে ২৬৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১০৩৮ জন শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available