নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ বীরদের দেশ উল্লেখ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশের অনেক নিভৃতচারী বীর আছেন, যারা দেশ থেকে দূরে বিশ্বজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন।

২২ ডিসেম্বর সোমবার নিজের ফেরিফয়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।


পোস্টে প্রেস সচিব লেখেছেন, দুই দিনে তিনটি জানাজায় অংশ নিলাম। শরিফ ওসমান হাদি ছিলেন একজন তরুণ বীর—রাজনীতিতে ‘ইনসাফ’ বা ন্যায়ের এক সতেজ কণ্ঠস্বর। লাখ লাখ মানুষ—কারো কারো মতে সংখ্যাটি দশ লাখেরও বেশি—তার জানাজায় শরিক হয়েছিলেন; যা প্রমাণ করে তিনি কীভাবে কোটি কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন। শরিফ ওসমান হাদি ছিলেন এক অনন্য বিস্ময়, যিনি আমাদের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছেন। তার তেজোদীপ্ত ও বাগ্মী ভাষণ আগামী প্রজন্মের ‘বিদ্রোহী’দের অনুপ্রাণিত করবে। তার নিঃস্বার্থ কর্মতৎপরতা ভবিষ্যতে আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের রূপরেখা বদলে দেবে।
তিনি লেখেন, সুদানে এক ড্রোন হামলায় বাংলাদেশের ছয়জন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। তারা ছিলেন আমাদের শান্ত গ্রামগুলো থেকে আসা নিভৃতচারী বীর—কারো স্বামী, কারো বাবা, আবার কারো বাবা-মায়ের আদরের সন্তান। অত্যন্ত মর্যাদা ও গাম্ভীর্যের সাথে তাদের শেষ বিদায় জানানো হয়েছে। আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী, কর্মকর্তা এবং জাতিসংঘ প্রতিনিধিরা এই তরুণদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেন, যারা বিশ্বের এক অস্থির জনপদে শান্তি ফেরাতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশের এমন অনেক নিভৃতচারী বীর আছেন, যারা দেশ থেকে দূরে বিশ্বজুড়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রেস সচিব লেখেন, আবদুল করিম খন্দকার (এ কে খন্দকার) ছিলেন একজন জিডি পাইলট, যিনি বিস্ময়করভাবে ৩,৪০০ ঘণ্টা যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করেছেন। নিভৃতচারী এই মানুষটি সারাদিনের কাজ শেষে পরিবারের সাথে সন্ধ্যা কাটাতে পছন্দ করতেন। বাইরে খাওয়া বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাওয়ার অভ্যাস তার খুব একটা ছিল না। কিন্তু প্রিয় মাতৃভূমিকে মুক্ত করার ডাক যখন এলো, তখন এই শান্ত ও স্বল্পভাষী মানুষটিই পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিমানবাহিনীর বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন এবং আমাদের মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন।
শফিকুল আলম আরও লেখেন, এ কে খন্দকার বিখ্যাত ‘কিলো ফ্লাইট’ গঠন করেছিলেন, যা মুক্তিযুদ্ধে এক চূড়ান্ত ভূমিকা পালন করেছিল। মুক্তিবাহিনীর উপ-প্রধান হিসেবে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধা, যিনি পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। যুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনী এবং জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা ‘বাংলাদেশ বিমান’ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। পরবর্তীতে তিনি নীরবে শেখ হাসিনার উপস্থাপিত ইতিহাসের বয়ানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন—এবং এর জন্য তাকে মাসুলও গুনতে হয়েছিল। বাড়িতে তিনি পড়ালেখা ও লেখালেখি করে সময় কাটাতেন। বাংলাদেশ বীরদের দেশ—যদি আপনি জানেন ঠিক কোথায় তাদের খুঁজতে হয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available