রাঙামাটি প্রতিনিধি: পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ উদ্যোগে এবার পাহাড়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র হ্রাসে কফি-কাজুবাদাম চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। তারই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিকভাবে রাঙামাটি সবচেয়ে বড় সাজেক ইউনিয়নের ১৪টি পাড়ায় ২৮৮টি পরিবারকে বাছাই করে কফি-কাজুবাদামের চারা বিতরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দুর্গম সাজেকে ২৭ জুলাই শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ চারা প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেছেন রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার। এসময় চারার সাথে সারসহ প্রয়োজনীয় কৃষিজ সরঞ্জামাদি দেওয়া হয় কৃষকদের।
রাঙামাটি জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সহযোগিতায় গৃহীত কফি ও কাজুবাদাম বাগান সম্প্রসারণ প্রকল্প প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য হ্রাসকরণ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য রাঙামাটি জেলাধীন বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নে ১৪ টি পাড়ায় ২৮৮টি পরিবারের মাঝে ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৯২০টি কফি চারা ও ১ লক্ষ ৬ হাজার ৫৬০টি কাজুবাদাম চারা বিতরণ করা হয়েছে।
রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, সাজেক উপত্যকার সহায় সম্বলহীন জুমিয়া চাষীদের কথা চিন্তা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা মহোদয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ বাগান সৃজন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হতে চলেছে, তাই উপকারভোগীদের স্থানীয় কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে কারিগরি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সঠিকভাবে চারা রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে পরিষদের পক্ষ হতে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। এ প্রকল্প আগামীতেও রাঙামাটি জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে চলমান রাখা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন তিনি।
এসময় পরিষদের সদস্য দেব প্রসাদ দেওয়ান, প্রতুল চন্দ্র দেওয়ান, সাবেক উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাবুল তালুকদার, সাধারণ বীমার সাবেক কর্মকর্তা হেমন্ত বিকাশ চাকমা, বেসরকারি সংস্থা আশিকার নির্বাহী পরিচালক বিপ্লব চাকমা, চারা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলি নার্সারির সমন্বয়কারী শিমুল চাকমা, সাজেক থানার কর্মকর্তা, স্থানীয় মুরুব্বী, বাগানচাষী এবং জাতীয় ফুটবলার কিংশুক চাকমা প্রমুখ উক্ত চারা বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, দুর্গম সাজেকের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জনসাধারণ অবহেলিত ও বঞ্চিত মন্তব্য করে স্থানীয় শিক্ষাবিদ ভদ্র সেন চাকমা বলেন, জনবসতির আদিকাল থেকেই সাজেক ভ্যালির বিশাল জনপদের সহায় সম্বলহীন মানুষগুলো ইতিহাসের সব থেকে উপেক্ষিত ও নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত ছিল। সরেজমিনে পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা মহোদয় পরিদর্শন করতে আসলে তিনি স্বচক্ষে অত্রাঞ্চলের মানুষের অভাব দুর্দশা পরিলক্ষণ করেন।
তারই ধারাবাহিকতায় উপদেষ্টার আন্তরিকতায় রাঙামাটি জেলা পরিষদের মাধ্যমে অত্রাঞ্চলের প্রায় ৩০২টি পরিবারকে কফি-কাজুবাদামের বাগান সৃজনের জন্য বাছাই করা হয়েছে। তাদেরকে বিনামূল্যে চারা দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সারও দিয়েছে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ।
দুর্দশা পীড়িত সাজেক ভ্যালির অর্থনৈতিক ও সামাজিক রূপান্তর আন্দোলনে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট সবার সর্বোচ্চ উদারনৈতিক সক্রিয় সহযোগিতা সর্বান্তঃকরণে কামনা করে তিনি বলেন, পার্বত্য উপদেষ্টার আন্তরিকতায় প্রাপ্ত দরিদ্র হ্রাসকরণ এই প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাগণসহ স্থানীয় সামাজিক প্রশাসনের তদারকির কোনো বিকল্প নেই।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available