• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ১৩ই পৌষ ১৪৩২ রাত ১১:০৮:২০ (27-Dec-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

কাগজে কলমে আশ্রয়ণ প্রকল্প, বাস্তবে পরিত্যক্ত ঘর

ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বেলওয়া আন্দিয়া পুকুর এলাকায় অবস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্প কাগজে কলমে থাকলেও বাস্তবে তা পরিত্যক্ত ঘর, জঙ্গল ও মাদক সেবিদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। অসহায় ও ভূমিহীন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো এখন অযত্ন ও অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।সরেজমিনে দেখা যায়, ২০০৪ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় এই এলাকায় ব্যারাক পদ্ধতিতে ৩০টি পরিবারের জন্য ৩০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ব্যারাক বিশেষভাবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের জন্য নির্মিত ছিল। মূলত ৩টি ব্যারাকের মাধ্যমে ৩০ টি পরিবারের আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তীতে এসব ঘর উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হলেও বর্তমানে সেখানে বসবাস করছে মাত্র ৫টি পরিবার। বাকি ২৫টি পরিবার নতুন ঘর পাওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই একে একে প্রকল্প এলাকা ছেড়ে চলে গেছে।পরিত্যক্ত ঘরগুলোর মধ্যে দুই-তিনটি তালাবদ্ধ থাকলেও অধিকাংশ ঘরের দরজা-জানালা উধাও। কোথাও টিন খুলে নেওয়া হয়েছে, কোথাও লতাগুল্মে ঢেকে গেছে পুরো ঘর। দীর্ঘদিনের অযত্ন ও অবহেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কিছু ঘর এখন মাদক সেবিদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে।স্থানীয়রা জানান, ঘর বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, সচ্ছল ব্যক্তিদের নামে ঘর বরাদ্দ, পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের অভাব, নাগরিক সুবিধার ঘাটতি এবং প্রকল্প এলাকার দূরবর্তী অবস্থান এসব কারণেই উপকারভোগীরা একে একে ঘর ছেড়ে চলে গেছেন। অনেক ক্ষেত্রেই সরকারি ঘর বিক্রি বা পরিত্যাগের প্রবণতাও দেখা গেছে।স্থানীয় বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখানে যেসব আদিবাসী পরিবারকে ঘর দেওয়া হয়েছিল, তাদের অনেকেরই নিজস্ব ভালো ঘরবাড়ি ছিল। তারা ভেবেছিল সরকারি ঘরে থাকলে আরও সুবিধা পাবে। কিন্তু কয়েক বছর পর যখন বুঝতে পারে এখানে বাড়তি কিছু পাওয়া যাচ্ছে না এবং কাজের জন্য দূরে যেতে হয়, তখন তারা নিজেদের বাড়িতে ফিরে যায়। এখন সবচেয়ে নিরীহ দুই-তিনটি পরিবার এখানে কোনো রকমে বসবাস করছে।’আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী আশি বছর বয়সি গেডা মার্ডি জানান, ‘২০ বছর ধরে আছি। আগে ৩০টা ঘর আছিল, সবাই পালিয়ে গেছে। এখন আমার ঘরের টিন নষ্ট হয়ে গেছে। বর্ষাকালে খুব কষ্ট হয় থাকতে।’আরেক ব্যক্তি ফুলকু বেসরা বলেন, ‘আমরা একসাথে ৩০ টি পরিবার এখানে বসবাস করতাম। কিন্তু অনেকে অন্য জায়গায় সরকারি ঘর পাওয়ায় কিছু পরিবার সেখানে চলে গেছে। আবার কিছু পরিবার তাদের নিজের জায়গায় চলে গেছে।’অন্যদিকে, আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে চলে যাওয়া ছোট মুরমু জানান, ‘১২-১৩ বছর ওখানে ছিলাম। পরে বাবা মারা গেলে মা একা হয়ে যায়। তাই আমরা আবার নিজের বাড়িতে ফিরে আসি। এখন এখানে নতুন করে সরকারি রঙিন টিনের ইটের ঘর পাইছি। এই জমিটা কেনার জন্য বায়না করেছি, শুধু কবলা বাকি আছে।’এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সংশ্লিষ্ট ২ নং পলশা ইউপি চেয়ারম্যান কবিরুল ইসলাম প্রধানের সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।এ বিষয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবানা তানজিন বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এই মাত্র জানতে পেরেছি। আমি ও উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা একসঙ্গে প্রকল্পটি পরিদর্শন করব। এরপর যেভাবে ভালো হয়, সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’