• ঢাকা
  • |
  • বুধবার ১৯শে ভাদ্র ১৪৩২ দুপুর ১২:৩০:৩৭ (03-Sep-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

মেহেরপুরে ডিসি ইকোপার্কের প্রকল্পের কাজ না করেই তুলে নেয়া হয়েছে সাড়ে ২৪ লাখ টাকা

মেহেরপুর প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় ডিসি ইকোপার্কে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ও একই অর্থবছরের অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (কাবিটা) কর্মসূচির পাঁচ প্রকল্পের সাড়ে ২৪ লাখ টাকা হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে।প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন না করেই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের তীর এখন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মনসুর রহমানের দিকে। আর এর সাথে জড়িত রয়েছেন প্রকল্পের দুই পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) এর সভাপতি (সংরক্ষিত) ইউপি সদস্য জরিমন নেছা ও ইউপি সদস্য ফেরদৌসী আক্তার।জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচি আওতায় উপজেলা সাহারবাটি ইউনিয়নের ভাটপাড়া ডিসি ইকোপার্কে শিশু পার্কে রাইড স্থাপন, ফেন্সিং ও রংকরণ বাবদ বরাদ্দ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, পার্কে ওয়াশরুম সংস্কার ও পিকনিক সেড মেরামত বাবদ বরাদ্দ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, পার্কে অস্থায়ী দোকান সেড নির্মাণ বাবদ বরাদ্দ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (কাবিটা) কর্মসূচি আওতায় ডিসি ইকোপার্কের শিশুপার্ক থেকে বধ্যভূমি, কাজলার পাড় থেকে আশ্রয়নমুখী রাস্তা এইচবিবিকরণ ও দোকানের সামনের মাঠে মাটি ভরাটকরণ বাবদ বরাদ্দ ৮ লাখ টাকা, পার্কের প্রধান গেট নির্মাণ ও গেটের পাশের মাটি ভরাটকরণ বাবদ ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কাজ না করেই অর্থ উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে।সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইকো পার্কের ভিতর উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ নামমাত্র এস্টিমেট ছাড়া নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে এইচবিবি করণ, আংশিক গেট নির্মাণ ও অস্থায়ী দোকানের সামনে মাটি ভরাট হয়েছে। যতটুকু মাটি ভারাট হয়েছে সেই মাটি পার্কের একমাত্র পর্যটন স্থান বধ্যভূমির সামনে থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলন করা হয়েছে। শিশু পার্কে রাইডগুলো ভেঙ্গে নষ্ট হয়েছে। যেখানে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। টয়লেটগুলোর অবস্থা খুবই বাজে। জঙ্গল আর কাদায় পার্কে দাঁড়ানোর উপায় নেই। প্রকল্পে কাজের মেয়াদ গত ৩০ জুনে শেষ হলেও দৃশ্যমান কোনো উন্নয়নই হয়নি।এ বিষয়ে ডিসি ইকো পার্কের ইজারাদার আসমাউল হুসনা জানান, পার্কের পাঁচটি প্রকল্পের কাজ এস্টিমেট ছাড়া সঠিকভাবে না হয়ে সবই তাল-তামাশা হচ্ছে। দৃশ্যমান কিছুই হয়নি। কাজের টাকা প্রকল্প কর্মকর্তা ও দুই পিআইসির যোগসাজশে লুট হয়ে গেছে। এছাড়া বাইরে থেকে মাটি কেনার কথা থাকলেও পার্কের মধ্যে থেকে মাটি উত্তোলন করে মাটি ভরাট করছে। নির্মাণ হয়নি পিকনিক সেড। বাথরুমের বেহাল দশা। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে এইচবিবি করণ করা হয়েছে। এমনকি এখানে পর্যটকদের বসার জায়গাও নেই।  এখানে একজন গার্ড থাকলেও তিনি ডিউটি করেন না। এভাবে চলতে থাকলে পার্ক পর্যটক শূন্য হয়ে পড়বে এবং একজন ইজারাদার হিসেবে আমি ক্ষতিগ্রস্থ হবো।পার্কের মুদি দোকান মালিক জয় জানান, পার্কের পরিবেশ আগের থেকে বেহাল হয়েছে। পর্যটক তেমন একটা আসে না। দোকানে বেচাকেনাও নেই। এছাড়া আমার বাবা শফি মিয়া শিশুপার্ক ইজারা নিয়েছে, সেখানে যে রাইডগুলো ছিলো সব কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। শিশুদের জন্য যেসব রাইড আছে, সেগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। পুরনো রাইডগুলো সংস্কার করা এবং নতুন রাইড স্থাপন করার কথা থাকলেও এখনো কোনো কাজই হয়নি। এতে আমরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।পার্কে ঘুরতে আসা পর্যটক মশিউর রহমান জানান, জেলাতে একটি মাত্র পার্ক, যেখানে দেখার মত কোনো কিছু নেই। পরিবেশ ভালো নেই। বাথরুমের অবস্থা বেহাল। চারিদিকে ঝোপ-ঝাড়ে ভরা। এমন অবস্থা হলে দিন দিন জেলার একমাত্র পার্কটি অবহেলায় বন্ধ হয়ে যাবে।এদিকে প্রকল্পের পিআইসি (প্রকল্প কমিটি) সভাপতি সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য (সংরক্ষিত) জরিমন নেছা ও ফেরদৌসী আক্তার মাটি বাইরে থেকে না কিনে পার্কের মধ্য থেকে উত্তোলন করার কথা স্বীকার করে বলেন, কাজের কোনো এস্টিমেট পাইনি। এস্টিমেট ছাড়া কিছু কাজ হয়েছে। বাকি কাজও চলমান।প্রকল্পের মেয়াদ শেষ ও টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে দুই পিআইসি বলেন, বৃষ্টির কারণে সঠিক সময়ে কাজ শেষ করতে পারি নাই। আর টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মনসুর রহমান জানেন।সাহারবাটি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আসমাতারা খাতুন বলেন, 'এই কাজটি সম্পর্কে আমি খুব একটা অবগত নেই।’প্রকল্প সম্পর্কে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মনসুর রহমান কোনো তথ্য দেননি। একাধিক বার বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ রয়েছে প্রকল্প নিয়ে সাংবাদিকদের কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না।কাজ না করে বিল উত্তোলনের ব্যাপারে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, নিয়মে বলা আছে কাজ করে বিল উত্তোলন করতে হবে। কাজ না করে পিআইসি’রা যদি বিল সাবমিট করে টাকা তুলে নেয়, তাহলে পিআইও প্রকল্প পরিদর্শন করে কাজ বুঝে নেবে। আর কাজের ব্যাপারে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে, তদন্ত শেষে আপডেট পাওয়া যাবে।এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) রেজওয়ানুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ দিলে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।