মহাসড়কের মাঝে শাক-সবজি চাষ, নজর কাটছে ভিন্ন সৌন্দর্য
                                                             মোহাম্মদ মোরশেদ আলম  স্টাফ রিপোর্টার গাজীপুর: চারলেনের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক এখন আর কেবল যাত্রী ও যানবাহনের জন্য ব্যস্ত সড়ক নয়, এর মাঝের প্রশস্ত ডিভাইডার তৈরি হয়েছে ভিন্ন এক সবুজের রাজ্য। মহাসড়কের মাঝের পথজুড়ে গড়ে উঠেছে শাকসবজির চাষাবাদ। ফলে রাস্তার দু’পাশের যাত্রীদের চোখে ধরা দিচ্ছে এক ভিন্ন সৌন্দর্য, যা সড়কে এনে দিয়েছে সতেজতা ও প্রাণের ছোঁয়া।এই চিত্র ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈরে। প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দুই পাশের বাসিন্দারা এসব সবজি চাষাবাদ করছেন।স্থানীয় প্রশাসন ও সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মাঝে প্রশস্ত ডিভাইডার (মিডিয়ান) আছে। এ ডিভাইডারে ফুল ও ঔষধিসহ বিভিন্ন গাছ রোপণ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। কোথাও এসব গাছ বড় হয়েছে আবার অনেক জায়গায় গাছালে পালন পালন না করায় গাছগুলি মরে গেছে এবং সেসব জায়গা ফাঁকা পড়ে আছে। ডিভাইডারে লাগানো গাছের ফাঁকে ফাঁকে খালি জায়গায় চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের শাক, সবজি ও নানা জাতের ফসল। এ যেন পিচঢালা কালো সড়কে লাল-সবুজের হাসি। মাটির উর্বরতা ভালো হওয়ায় চমৎকার ফলনে কৃষকদের আয়ও বেড়েছে। সাধারণ মানুষ পাচ্ছে তরতাজা শাক সবজি। শুধু সবুজ সৌন্দর্যই নয়, এই সবজি বিক্রি করে আয়ও হচ্ছে। এতে যেমন পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখা হচ্ছে, তেমনি স্থানীয়দেরও বাড়তি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে।এলাকাবাসী ও পথচারীরা বলেন, আইল্যান্ডের উপরের অংশ ফাঁকা শূন্য থাকায় দীর্ঘ অংশ জুড়ে বিভিন্ন জাতের শাক-সবজির চাষ করছেন কিছু উৎসাহী মানুষ। এতে তাদের পরিবারের খাদ্যচাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাজারজাতকরণও হচ্ছে। আগে সড়কের পাশের আইল্যান্ড ময়লা আবর্জনায় ভরে থাকতো। এখন কিছু মানুষের উদ্যোগে এখানে রঙ বেরঙের শাক সবজির সমারোহ হয়ে উঠেছে। দেখতেও অনেক ভালো লাগছে।সরেজমিনে দেখা যায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার শ্রীফলতলী থেকে টাঙ্গাইলের গোড়াই পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ। এই ১০ কিলোমিটার সড়কপথে  দুই পাশে সার্ভিস লেন এবং মাঝে সড়ক বিভাজন রয়েছে। জায়গাটি বেশ প্রশস্ত হওয়ায় সড়কের দুই পাশের বাসিন্দারা সেখানে রীতিমতো চাষাবাদ শুরু করেছেন। সেই জায়গাটি আগাছামুক্ত ও পরিষ্কার করে পরম যত্নে লালশাক, পুঁইশাক, পালং শাক, ঢেঁড়স , পেপেসহ বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজির চাষ করছেন সড়কের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা। রঙ বেরঙের এসব শাক সবজির গাছ মহাসড়কের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় পিচ ঢালা কালো মহাসড়কের মাঝে যেন লাল-সবুজের মিতালী। এ যেন আরেক সবুজারোণ্য।কালিয়াকৈর উপজেলার শ্রীফলতলী এলাকায় সড়কের মাঝে চাষ করার জন্য জমি তৈরি করছেন মো. আলাউদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সড়কের মাঝে এই জায়গাগুলি দীর্ঘদিন ধরে দেখছি পড়ে রয়েছে। অনেক জায়গায় ফুলের গাছ লাগালেও এখানে কিছুই লাগানো হয়নি। ঘন জঙ্গল হয়ে নোংরা হয়ে পড়েছিল। এগুলো পরিষ্কার করে মৌসুমি সবজি চাষ করছি। এতে নিজেদের চাহিদা মিটছে। প্রতিবেশীরাও খাচ্ছে। কেউ চাকরির পাশাপাশি, কেউবা ব্যবসার পাশাপাশি অবসর সময়ে এই চাষবাস করছেন।ট্রাক চালক সমশের আলী বলেন, আমি বালির ট্রাক চালাই ৷পাশাপাশি আইল্যান্ডের মধ্যে সবজি চাষ করি। লোকজন বাহবা দেয়৷ অনেক ভালো ফলন হয়৷ আমাদের প্রয়োজন মিটে বিক্রিও করতে পারি।কালিয়াকৈর কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা  আতিক আহম্মদ ফাত্তাহ বলেন, আইল্যান্ডে সবজি চাষের বিষয়টি নজরে এসেছে। আমরা সবসময় যেকোনো ধরনের সবজি চাষকে উদ্বুদ্ধ করে থাকি। তাদের সার বীজসহ প্রয়োজনীয় সেবা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে চাই।