• ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ১৮ই ভাদ্র ১৪৩২ দুপুর ১২:৩৬:০৪ (02-Sep-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

প্রক্সি কাণ্ড: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে জালিয়াতি চক্রের ২ সদস্যসহ আটক ৩

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: প্রক্সি জালিয়াতির সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে গুচ্ছভুক্ত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ জনকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে আটকদের পুলিশের কাছে তুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে।জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা হলেন মো. পনির উদ্দিন খান পাভেল, সালমান ফারদিন সাজিদ সিয়াম। এদের মধ্যে সালমান ফারদিন সাজিদ সিয়াম জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি আর্থিক চুক্তির বিনিময়ে প্রক্সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। এছাড়া প্রক্সি জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া আটক আর এক শিক্ষার্থী হলেন ওবায়েদ হাসান আফিক যার মেরিট পজিশন ৭৬। তিনি ত্রিশালের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।  ৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার প্রক্সি জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী ওবায়েদ হাসান আফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চূড়ান্ত ভর্তি হতে গেলে তাকে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় জেরা করতে থাকে ভর্তি কমিটির শিক্ষকরা। জেরার একপর্যায়ে আফিক ১ লাখ টাকা চুক্তিতে প্রক্সি জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির বিষয়টি স্বীকার করেন। পরবর্তী সময়ে আফিকের মাধ্যমে ফোন দিয়ে জালিয়াতি চক্রের দুই সদস্যকে ডেকে আনা হয়। কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. সুজন আলী বলেন, ‘আজ ভর্তির শেষ দিন ছিল। বিভাগের ৪০টি সিটের মধ্যে শেষ শিক্ষার্থী হিসেবে ওবায়েদ হাসান আফিক ভর্তি হতে আসে। তার কিছু আচরণ আমাদের কাছে সন্দেহজনক মনে হয়। পরবর্তী সময়ে আমরা তাকে ভর্তি পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কিছু সাধারণ প্রশ্ন করি কিন্তু সে কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পারে না। এতে আমাদের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। পরে তার সাথে ভর্তি হতে আসা ব্যক্তিকে নিয়ে আসতে বললে সে জালিয়াতি চক্রের সদস্য পনির উদ্দিন খান পাভেলকে ডেকে নিয়ে আসে। পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ সময় জেরার পর আমরা এই জালিয়াতি চক্রের বিষয়ে জানতে পারি।’জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বন্ধুদের মাধ্যমে প্রক্সি জালিয়াতি চক্রের সদস্য মো. পনির উদ্দিনের সাথে ওবায়েদ হাসান আফিকের পরিচয় হয়। পরবর্তী সময়ে আফিক তার বাবার সাথে পনিরকে পরিচয় করিয়ে দেয়। ১ লাখ টাকার বিনিময়ে আফিককে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর শর্তে আফিকের বাবা জাহাঙ্গীর আলমের সাথে পনিরের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত ভর্তি শেষে পনিরকে ১ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল।এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা এবং সরকারি চাকরির পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতি করে আসছে। জিজ্ঞাসাবাদের জানা গেছে, বাবু ভাই নামের এক ব্যক্তি এই চক্রটি পরিচালনা করছেন যিনি গাজীপুরের টঙ্গী এলাকারা বাসিন্দা এবং এই চক্রের সাথে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাসহ উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা জড়িত। এর মাধ্যমে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগে কৌশিক কুমার চন্দ্র নামের এক শিক্ষার্থী এবং টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পূণ্য দে মৃধু নামের এক শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার প্রমাণ মিলেছে।জালিয়াতি চক্রের সদস্য নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সালমান ফারদিন সাজিদ সিয়াম ১ লাখ টাকা চুক্তিতে ভর্তি পরীক্ষায় কৌশিক কুমার চন্দ্রের বদলে প্রক্সি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জোবায়েদ ইসলাম শান্তর মাধ্যমে এই চক্রের সাথে পরিচয় হওয়ার কথা জানিয়েছেন সিয়াম। তবে আটককৃত শিক্ষার্থী ওবায়েদ হাসান আফিক এবং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী পূণ্য দে মৃধুর বদলে ভর্তি পরীক্ষায় কে প্রক্সি দিয়েছেন সেটি জানা যায়নি।জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, প্রক্সি পরীক্ষার সবগুলোই জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে সম্পন্ন হতো৷ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি প্রস্তাব করেছি। আগামী রোববার এই তদন্ত কমিটি প্রকাশ করা হবে। আশা করি, তদন্তের মাধ্যমে বিষয়গুলো উঠে আসবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’