• ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ১৮ই ভাদ্র ১৪৩২ দুপুর ০২:০১:০৩ (02-Sep-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

বকশীগঞ্জে জিঞ্জিরাম ও ব্রহ্মপুত্রের নদের ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, দিশেহারা নদী পাড়ের মানুষ

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি: জামালপুরের বকশীগঞ্জে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ ও জিঞ্জিরাম নদীর ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ। এতে করে উপজেলার সাধুরপাড়া ও মেরুরচর ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের বসতভিটাসহ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বাংগাল পাড়, কুতুবের চর ও মেরুরচর ইউনিয়নের উজান কলকিহারা, ফকির পাড়া ও বাঘাডুবা গ্রামে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের শব্দে ঘুম হারাম হয়ে গেছে এসব গ্রামের মানুষের। গত ১৫ দিনের ভাঙনে অনেক পরিবারই এখন নিঃস্ব। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় চরম হতাশায় ভুগছে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের। প্রকৃতির নির্মমতায় চোখের জলে ভাসছে ভাঙন কবলিতরা।নদী ভাঙনে সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বাঙ্গালপাড়া, কুতুবেরচর ও মেরুরচর ইউনিয়নের উজান কলকিহারা, বাঘাডোবা ও ফকির পাড়া গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবারের বসত ভিটা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে কয়েকশ’ বিঘা ফসলি জমি।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইতোমধ্যে বাঙ্গালপাড়া ও কুতুবেরচর গ্রামের জিন্নাহ মিয়া, জুব্বার আলী, মিস্টার আলী, মিল্লাত মিয়া, ফজল মিয়া,  মানিক আলী, ইয়ার হোসেন, শহিজল হক, আব্দুল হামিদ, লুৎফর রহমান সহ প্রায় ৩০ জনের ৫০ টি বাড়িঘর ও একটি গ্রামীণ রাস্তা সহ কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটি নদীতে ভেঙে গেছে। ফলে এ দুই গ্রামে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে বাঙ্গালপাড়া, কুতুবেরচর, বাঘাডোবা, উজান কলকিহাড়া, ফকির পাড়া এলাকার শতাধিক বাড়িঘর ও শত শত বিঘা ফসলি জমি। প্রতিবছর বন্যা এলেই প্রকৃতির আজাব শুরু হয় নদী ভাঙা মানুষের। নদী ভাঙনের ফলে বসতভিটা, ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে পরিবারগুলোর। নদী ভাঙন রোধে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ না থাকার কারণে ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ দুর্দশায় পড়লেও এখন পর্যন্ত কেউ খোঁজ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।এসব পরিবার বার বার নদী ভাঙনের শিকার হওয়ায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন। এ কারণে সামাজিক মর্যাদাও হারিয়েছেন তারা। স্থানীয়দের দাবি ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নিলে অস্তিত্ব হারাতে পারে পাঁচটি গ্রাম। তাই অবিলম্বে বাঁধ নির্মাণ ও ডাম্পিং ফেলে এই গ্রামগুলোকে ভাঙন থেকে রক্ষার দাবি জানান এলাকাবাসী।ভাঙন কবলিত গ্রামের আব্দুস সাত্তার বলেন,  এসব চর এলাকাবাসীর পাশে কেউ নেই, নির্বাচন এলে অনেক নেতাকর্মীদের আনাগোনা দেখা যায়, ভোটের বিনিময়ে অনেক কিছুই দিতে চায়, ব্রিজ করে দিবে বাঁধ করে দিবে ইত্যাদি নানান ওয়াদা দেয় কিন্তু নির্বাচন শেষ হয়ে গেলে সেসব কাজ তো দূরের কথা নেতাকর্মীদের খুঁজে পাওয়া যায় না। এই মুহূর্তে এই অসহায় লোক গুলো যে তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিবে সে লোক পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না।কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, নদীতে পানি কম কিন্তু নদীভাঙ্গন ব্যাপক, দুইটি ঘর সরিয়েছি আরেকটা সরাচ্ছি, গরু, বাছুর, স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বিপাকে আছি, ভিটাবাড়ি তো সব নদীতে চলে গেল, থাকবো কোথায়? প্রশাসনের কোনো লোক খোঁজ খবর নিচ্ছে না এমনকি নদী ভাঙন ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সাজেদা বেগম বলেন, এইবার নিয়ে চারবার ঘর সরিয়ে নিলাম আর কত, টাকা পয়সাও নেই এখন আমরা নিঃস্ব। প্রতিবন্ধী আব্দুল জুব্বার বলেন, নদীর ভাঙনে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। বারবার ভাঙনের ফলে  মানচিত্র বদলে যাচ্ছে এই এলাকার। আমরা ভিটামাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে বিপদের মধ্যে রয়েছি। তাই ভাঙন রোধে  কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।মেরুরচর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মঞ্জু জানান, অনেক প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হুমকির মুখে রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে শিগগিরই ডাম্পিং করা না হলে এই পাঁচ গ্রামের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। তাই আমরা জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মাসুদ রানা জানান, সাধুরপাড়া ও মেরুরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে তা আমরা অবগত হয়েছি। যে সব পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে এবং ভাঙন ঠেকাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।