পাওনা টাকা উদ্ধারে সহযোগিতা চেয়ে সংবাদ সম্মেলনে কাতার প্রবাসী ব্যবসায়ীরা
বিশেষ প্রতিবেদক: কাতারে ৩ প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর ৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দেশে পালিয়ে এসেছেন তৌহিদুল ইসলাম নামের আরেক বাংলাদেশী। তার দেশে পালিয়ে আসায় এখন বিপদে পড়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছনে ভুক্তভোগী ৩ বাংলাদেশি।
জানা যায়, ২ আগস্ট স্থানীয় সময় বুধবার রাতে কাতারের রাজধানী দোহার আল মানচুরা লুলু এক্সপ্রেস বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় ৩০৯ নম্বর অফিসে টাকা আত্মসাৎকারী তৌহিদুল ইসলামের বিচার দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী ৩ প্রবাসী বাংলাদেশি মো. ইউনুছ হোসেন রাজিব, মো. আবু তাইয়্যেব ও মো. আবদুল কুদ্দুস।
অর্থ আত্মসাৎ করে কাতার থেকে দেশে পালিয়ে আসায় তৌহিদুল ইসলামের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারে কাতারের বাংলাদেশ দূতাবাস, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও নোয়াখালী পুলিশ সুপারের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রতারণার শিকার ৩ ভুক্তভোগী বাংলাদেশী।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ইউনুছ হোসেন রাজিব বলেন, প্রতারক তৌহিদুল ইসলামের গ্রামের বাড়ী নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ৫ নং অর্জুনতলা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড দক্ষিণ মানিকপুরে। আমার বাড়িও একই উপজেলা নোয়াখালীর সেনবাগ হওয়ায় একান্ত বিশ্বাস করে ২০১৮ সাল থেকে তৌহিদুলকে কাতারে আমাদের কোম্পানি ভিক্টোরিয়া রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার দেখভালের দায়িত্ব দেই। কোম্পানির অর্থিক লেনদেন ও আমার কোম্পানির রিয়েল এস্টেট ব্যবসার বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের ভাড়া সংগ্রহের দায়িত্ব ছিলো তৌহিদুলের উপর। ২০২২ সালে কোম্পানির ৩ বছরের হিসাব চাওয়া হলে তৌহিদুল ইসলাম হিসাব দিতে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে অপারগতা জানায়। এ অবস্থায় ২০২২ সালের ১ জুলাই আমার কোম্পানির পাওনা আদায়ে এক শালিসি বৈঠকের মাধ্যমে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সামনে মোট ৪,৮৫,৭৩৭ কাতারি রিয়াল দেয়ার অঙ্গীকার করে তৌহিদুল। এসময় স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ১০০ টাকা মূল্যেমানের স্ট্যাম্পে ৩ মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করবে বলে প্রতারক তৌহিদুল ইসলাম অঙ্গীকার করে। কিন্তু ১ বছর অতিবাহিত হলেও সে পাওনা অর্থ পরিশোধ না করে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার স্ত্রী ইসরাত জাহান, বোন হাসনা শিউলি ও তার মায়ের বাংলাদেশী ব্যাংক একাউন্টে স্থানান্তর করে। পরে চলতি বছর জুলাই মাসের ২৩ তরিখে সে কাতার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে।
ভুক্তভোগী ইউনুছ হোসেন রাজিব আরও জানান, প্রতারক তৌহিদুল ইসলাম দেশে পালিয়ে যাওয়ার পর আমার পরিবারকে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায় এবং আমি বাংলাদেশে গেলে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে আমার পিতা হুমায়ুন কবির বাদি হয়ে ২৭ জুলাই নোয়াখালীর সেনবাগ থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ভুক্তভোগী আরও জানান, আমি কাতারি নাগরিকদের কাছ থেকে বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে ব্যাবসা পরিচালনা করতাম। তৌহিদুল সে ভাড়ার টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে। এখন আমি ভাড়ার টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। কিছুদিনের মধ্যে ভাড়ার টাকা পরিশোধ করতে না পারলে কাতারি নাগরিকদের দেয়া মামলায় আমাকে জেলে যেতে হবে। আমি এমন অবস্থায় পাওনা টাকা উদ্ধারে বাংলাদেশ দূতাবাস ও সরকারের কাছে সহযোগিতা চাচ্ছি।
উল্লেখ্য, প্রতারক তৌহিদুল ইসলামের প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন আরও ২ কাতার প্রবাসী। ভুক্তভোগী আবু তাইয়্যেবের পাওনা কাতারি সাড়ে ৭ লাখ রিয়াল ও আরেক ভুক্তভোগী আবদুল কুদ্দুসের পাওনা কাতারি ৫০ হাজার রিয়াল।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কাতার প্রবাসী ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, নিয়াজ কবির চৌধুরী ও রেজাউল করিম মজুমদার।
এসময় গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বাংলা টিভির কাতার প্রতিনিধি আকবর হোসেন বাচ্চু, আর টিভির কাতার প্রতিনিধি গোলাম মাওলা আকাশ, এখন টিভির কাতার প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন মামুন, মোহনা টিভির কাতার প্রতিনিধি ইউসুফ পাটোয়ারী লিংকন, চ্যানেল ২৪ এর কাতার প্রতিনিধি কাজী মোহাম্মদ শামীম, এস এ টিভির কাতার প্রতিনিধি আহসান উল্লাহ সজীব।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ দূতাবাসের দ্বিতীয় সচিব ও দূতালয় প্রধান মোহাম্মদ নাছির বলেন, কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলামের সহায়তায় নোয়াখালী পুলিশ সুপার বরাবর বিচার চেয়ে একটি আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা। আমরা কাতারের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে নোয়াখালী পুলিশ সুপারকে আসামি তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত তৌহিদুল ইসলামের বাংলাদেশী মুঠোফোন নম্বরে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available