• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ১৭ই কার্তিক ১৪৩২ রাত ১১:০২:২৬ (01-Nov-2025)
  • - ৩৩° সে:

গাছের শিকড়ে জীবনের শিল্প, দারুশিল্পী মোস্তফার হাতে নতুন রূপ পাচ্ছে প্রকৃতি

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি : পরিত্যক্ত গাছের গোড়ালি কিংবা শিকড় যা অনেকের চোখে কেবলই জ্বালানি কাঠ। সেই অবহেলিত অংশগুলোই শিল্পীর হাতে হয়ে উঠছে দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্ম। কাঠের গায়ে হাতুড়ি ভাটালির খটাখট শব্দে যেন প্রকৃতিই ফিরে পায় নতুন জীবন।পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার ইন্দুরহাট সোহাগদল ইউনিয়নের কৌঁড়িখাড়া গ্রামের সন্ধ্যা নদীর তীরে ‘শেকড় থেকে শেকড়ে শিল্পকর্ম’ নামে এক শিল্পভুবন গড়ে তুলেছেন দারুশিল্পী গোলাম মোস্তফা।দারুশিল্পী হিসেবে ঢাকায় কাজ করেছেন তিনি। পৈতৃক পেশাকে টিকিয়ে রাখতে নিজের হাতে গড়ে তোলেন এই কারখানা। কোনো বাহুল্য সাজসজ্জা নেই, কেবল কাঠের গন্ধ আর শিল্পীর ঘাম মিলে সৃষ্টি করছে শিল্পের নতুন দিগন্ত।শিল্পী মোস্তফা জানান, বছরের দুই মাস দেশের বন-জঙ্গল ঘুরে অব্যবহৃত গাছের গোড়ালি ও শিকড় সংগ্রহ করেন তিনি। তারপর সারা বছর সেই শেকড়েই জন্ম নেয় শিল্পের প্রাণ। কখনো শিকড়ের ভাঁজে ফুটে ওঠে পশুপাখির অবয়ব, কখনো সামুদ্রিক মাছ বা প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর রূপ। তার হাতে তৈরি হয় দেয়ালচিত্র, ভাস্কর্য, হ্যারিকেন, ঢেঁকি ও গৃহস্থালির নান্দনিক আসবাবপত্র।মোস্তফা বলেন, ‘গাছের শিকড়ের প্রতিটি রেখা যেন জীবনের গল্প বলে। আমি কেবল সেই গল্পগুলোকে আকার দিই।’তবে জীবনের সঙ্গে লড়াই করে ৭ সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। কাঠের দাম বেড়েছে, বাজারে আগ্রহ কমেছে। তবু তিনি হার মানেননি।স্থানীয়রা জানান, ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও মোস্তফা প্রতিদিন ভোরে কাজে বসেন। যেকোনো শিকড় হাতে নিলেই তিনি বুঝে ফেলেন, সেটি দিয়ে কোন শিল্পকর্ম তৈরি করা সম্ভব। তাঁর দক্ষতা ও নিখুঁত কারিগরির জন্য এলাকায় রয়েছে যথেষ্ট খ্যাতি।তবে অর্থাভাব তাকে মাঝেমধ্যে দমিয়ে দেয়।শিল্পোদ্যোক্তা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘পিরোজপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন বহু ক্ষুদ্র কারিগর রয়েছেন, যারা হারিয়ে যাওয়া কুঠির শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখছেন। কিন্তু তাদের আর্থিক সহায়তা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় অনেকেই পেশা বদলে ফেলছেন।’তিনি আরও বলেন, ‘দারুশিল্প শুধু শিল্প নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য। একে রক্ষা করা মানে গ্রামীণ সংস্কৃতিকে রক্ষা করা।স্বরূপকাঠি বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা রিয়াজ-উল-হাসান জানান, ‘গোলাম মোস্তফা দীর্ঘদিন ধরে গাছের শিকড় দিয়ে দৃষ্টিনন্দন লোকশিল্প তৈরি করছেন। তার তৈরি কাজগুলোর গুণমানও বেশ ভালো। তিনি যদি বিসিকের নিয়ম মেনে নিবন্ধন করেন, তবে সরকারি ক্ষুদ্র ঋণ বা আর্থিক সহায়তা পাওয়ার সুযোগ থাকবে।’

জেলার ইতিহাস


দর্শনীয় স্থান